Ticker

10/খামার ব্যবস্থাপনা/ticker-posts

কিভাবে পিতামাতা কবুতরের সাহায্য ছারা নিজে নিজে বাচ্চা লালন পালন করবেন। ???


কবুতর গৃহপালিত পাখিদের মধ্যে অন্যতম একটি প্রজাতি। প্রায় ১০০০০ বছর পূর্বে থেকেই এদের গৃহপালিত হবার প্রমান পাওয়া যায়। কবুতর সাধারণত নিজের বাচ্চা নিজেই লালনপালন করতে পছন্দ করে। তবে আধুনিক সময়ে কবুতর পালনের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্যণীয়। কেউ কেউ মাতৃ কবুতরের মাধ্যমে ডিম ফুটিয়ে,প্রশিক্ষিত কবুতরের মাধ্যমে প্রতিপালন করে থাকেন। তবে কেউ কেউ আবার শুধু মাতৃ কবুতর থেকে ডিম সংগ্রহ করে ইনকিউবেটরে ডিম ফুটিয়েউ ফোস্টার কবুতরের মাধ্যমে বাচ্চা বড় করেন। তবে যদি আপনার
অভিজ্ঞ ফোস্টার না থাকে এবং আপনি ইনকিউবেটরে ডিম ফুটিয়ে থাকেন এবং লালন পালন করতে চান তবে আপনাকে কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হবে, না হলে বাচ্চা বড় করা কোনভাবেই সম্ভব হবে না।

 যদিও পূর্বে পিতামাতা ছারা বাচ্চা লালন পালন করার ব্যাপারে ধরনা দিয়েছি। তবে আজ আমি আলোচনা করবো কিভাবে পিতামাতা কবুতরের সাহায্য ছারা  ১ দিনের বয়সের থেকে পরিপূর্ণ বয়স পর্যুন্ত নিজে বাচ্চা লালন পালন করবেন এই বিষয়টি নিয়ে। এক্ষেত্রে আপনাকে কিছু খুব ভালোভাবে জানতে হবে।
১ / বাচ্চার বাসস্থান কেমন হবে ???
২/ কি পরিমান তাপমাত্রা প্রয়োজন। ???
৩/ বাচ্চা খাবার। ???
৪/ হ্যান্ড ফিডিং এর পদ্ধতি। ???
৫/ পরিচর্যা। ???
৬/ সর্তকতা। ???
 

চলুন তাহলে বিস্তারিত আলোচনায় আসা যাক। 

১/ বাচ্চার বাসস্থানঃ- যখন কবুতরের বাচ্চা ডিম ফুটে বের হয় তখন কবুতর বাচ্চা গুলোকে নিদৃষ্ট তাপমাত্রা দেবার লক্ষ্যে বুকের লোম দিয়ে ঢেকে রাখে ফলে বাচ্চা তার নিদ্ধারিত তাপমাত্রা পেয়ে থাকে। যদি বাচ্চা লালন পালন করতে চান তবে বাচ্চার বাসস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায় অনেকে অনেক সময় প্রশ্ন করেন পিতা-মাতা ছাড়া বাচ্চা লালন পালনের ক্ষেত্রে, 1 থেকে 7 দিনের বাচ্চার জন্য কেমন থাকার জায়গার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। 

 পদ্ধতিঃ- একটি মজবুত ও বড় কাগজের বক্স নির্বাচন করুন, যাতে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল করতে পারে,বক্সের গায়ে এমন ছিদ্র তৈরি করুন। এবার বক্সের মধ্যে কিছু কাগজ বা নিউজ পেপার বিছিয়ে দিন। যেন কবুতরের বাচ্চার জন্য একটি বিছানা তৈরি হয়। এখন বক্সে বাচ্চাটি রেখে কোন উষ্ণ এবং নিরাপদ স্থানে বক্সটি রাখুন। 

২/ তাপমাত্রাঃ-এবার বক্সটির মধ্যে ৯০° ডিগ্রি ফারেনহাইট অর্থাৎ ৩২° ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ব্যবস্থা করুন। 

 পদ্ধতিঃ- ৪০ ওয়াড এর একটি বিদ্যুৎতিক বাল্ব, বক্স এর মধ্যে সেট করুন, বাল্ব টি ১ ফিট দুরুত্বে সেট করুন প্রয়োজনে দুরত্ব কম বা বেশি করুন। অথবা বক্স এর মধ্যে যে কাগজের বিছানা তৈরি করেছেন তার নিচে একটি গরম পানি ভর্তি বোতলে রাখুন। এবং ২ ঘণ্টা পর পর তা পরিবর্তন করুন। বক্স এর মধ্যে একটি থার্মোমিটার রাখুন এবং মাঝে মাঝে লক্ষ্য করুন কোন ভাবেই যেন তাপমাত্রা কম বা বেশি না হয়। এভাবে ১৪ দিন পযন্ত ২৪ ঘন্টা একই পরিমাপে তাপমাত্রা ঠিক রাখুন। 

৩/ বাচ্চার খাবারঃ- যেহেতু আপনি নিজে লালন-পালন করবেন সেহেতু বাচ্চার খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকা আবশ্যক বলে মনে করি। সাধারণত প্রথম ২৪ ঘন্টা বাচ্চা কোন খাবার গ্রহণ করে না। ২ দিন থেকে ১০ দিন পযন্ত কবুতর বাচ্চাকে পিজন মিল্ক খাইয়ে থাকে। এর মধ্যে প্রথম ৫ দিন শুধুই পিজন মিল্ক বা ক্রপ মিল্ক খাইয়ে থাকে। এবং ৭ দিন থেকে ১০ দিন পযন্ত হালকা পরিপাক কৃত খাবারের সাথে ক্রপ মিল্ক খাইয়ে থাকে। এভাবে ধিরে ধিরে বাচ্চা শক্ত খাবার গ্রহন করতে শেখে এক পর্যাযে ২৪ থেকে ২৮ দিনে বাচ্চা নিজেই নিজের খাদ্য গ্রহণ করতে পারো । পোস্ট টি দেখুন "কিভাবে ক্রপ মিল্ক তৈরি করবেন" 

 ৪/ হ্যান্ড ফিডিং এর পদ্ধতিঃ- যেহেতু আপনি নিজে নিজে বাচ্চা লালন-পালন এর ভার গ্রহণ করবেন সেহেতু হ্যান্ড ফিডিং এর বিকল্প আর কিছুই নেই, এই বিষয়ে বিস্তারিত আমার একটি আরটিকেল রয়েছে।পোস্ট টি দেখুন। "কবুতরের বাচ্চাকে কিভাবে হ্যান্ড ফিডিং করাবেন"। কবুতরের বাচ্চার প্রথম ২৪ ঘন্টা কোন খাবারের প্রয়োজন হয় না। ২য় দিন থেকে আপনাকে ২থেকে ৩ ঘন্টা পরপর খাবার পরিবেশন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি বাচ্চার জন্য ক্রপ মিল্ক বা লিকুইড খাবার তৈরি করে নিতে পারেন। তবে আমি সাজেস্ট করবো আপনি "ক্রপ মিল্ক তৈরি" করে প্রথম ৬ দিন পরিবেশন করুন।এতে বাচ্চার গ্রথ ভালো হবে। 

 পদ্ধতিঃ- একটি সিরিঞ্জ বা একটি ফিডিং টিউব নিন। এবার এতে ক্রপ মিল্ক বা লিকুইড খাবার ভরুন।এখানে একটা বিষয় খেয়াল রাখা জরুরী সেটা হলো খাবারটি যেন কোন ভাবেই ঠান্ডা না হয়। সব সময় Room Temperature এ খাবার পরিবেশন করুন।খাবার টিউবে ভরার পর, আলতো করে বাচ্চার মুখটি খুলুন। এখন ভালোভাবে লক্ষ্য করলে খাদ্য নালির মুখ দেখতে পাবেন। টিউবটির মুখ খাদ্য নালির মুখে সেট করে মৃদু চাপ দিয়ে ধিরে ধিরে খাবার খাওয়ান। বাচ্চার খাদ্য থলি ৪/৩ ভাগ পরিপূর্ণ হলে খাওয়ানো বন্ধ করুন।এবং ২ থেকে ৩ ঘন্টা পর পর একই নিয়মে খরার পরিবেশন করুন।এভাবে ৬দিন পযন্ত শুধুই লিকুইড খাবার দিন তবে ১০ দিন পযন্ত শুধু ক্রপ মিল্ক বা লিকুইড খাবার পরিবেশন করা ভালো। হ্যান্ড ফিডিং এর জন্য এই পোস্ট টি ফলো করুন।
"কিভাবে কবুতরের বাচ্চাদের হ্যান্ড ফিডিং করানো যায়।"

৫/ পরিচর্যা:- আমারা অনেকেই বিভিন্ন সময়ে কবুতরের  সুস্থ বাচ্চা উৎপাদনে বাধাগ্রস্ত হই। মনে রাখবেন আসলে আপনি কোন কিছুতে সফলতা আসে না, এর জন্য প্রয়োজন সেই কাজটির পেছনে সঠিক শ্রম।এতে করে আপনি সফলতা পাবেন। তেমনি  কবুতরের সুন্দর ও সাস্থবান বাচ্চা পেতে আপনাকে কিছু কাজ নিয়মিত করতে হবে। অনেকে বলেন এত কাজ বা দেখাশোনা করার সময় নেই।একটা কথা মনে  রাখবেন কবুতর পালনে সফলতার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুস্থ বাচ্চা উৎপাদন করা।  পোস্ট টি দেখুনকবুতরের সুস্থ ও সুন্দর বাচ্চা পেতে আপনার করণীয়। " 

৬/ সর্তকতা:- কবুতরের বাচ্চা পিতামাতা ছারা লালন-পালন এর ক্ষেত্রে কিছু সর্তকতা অবলম্বন করা জরুরী। কেননা কবুতর যে কাজটি প্রাকৃতিক ভাবে সম্পর্ন করতে পারে সেই একই কাজ আপনাকে করতে হবে।তবে যত চেষ্টাই করেন আর যতই যত্নবান হন কোন ভাবেই কবুতর যে ভাবে স্বাভাবিক ভাবে তার বাচ্চাদের লালন পালন করে সেভাবে আপনি পারবেন না। উদাহরণ হিসেবে, ক্রপ মিল্ক এর কথাই ধরুন।  কবুতর যেভাবে আদর্শ ক্রপ মিল্ক উৎপাদন করে আপনি কি পারবেন সে ভাবে ক্রপ মিল্ক উৎপাদন করতে। কখনই পারবেন না কেমনা কবুতর যেটি করছে সেটি প্রাকৃতিক আর আপনি যেটি করছেন সেটি হাতে তৈরি। সুতরাং আপনাকে অনেক বিষয়ে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। যেমনঃ- 

১/ প্রতিবার লিকুইড খাবার পরিবেশন এর সময় নতুন করে তৈরি করে নেয়া ভালো তবে এটি সম্ভব না হলে প্রতিদিনের টা প্রতিদিন তৈরি করে নিতে হবে এবং ফ্রিজে রেখে দিয়ে প্রতিবার খাওয়ানোর পূর্বে সেটি নরমাল করে হালকা গরম করে,সেটি আবার ঠান্ডা অর্থাৎ রুম টেম্পারেচারে এনে কবুতরের বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে। কোন ভাবেই গরম খাবার বাচ্চাদের খাওয়ানো যাবেনা।

২/ সব সময় পরিস্কার পানি এবং খাবার পরিবেশন করতে হবে। 

৩/ দানাদার খাবার প্রদানের ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, খাবার এর সাইজ যেন ছোট হয়। বড় দানাদার খাবার দিলে বাচ্চার হজম প্রকৃয়ায় সমস্যা হবে।

৪/ কোন পরিস্থিতিতেই একবারে বেশি খাবার দিবেন না এতে বাচ্চার হজম প্রকৃয়ায় সমস্যা হবে এবং খাবার সঠিক ভাবে পরিপাক না হয়ে খাদ্য থলি ফুলে বাচ্চা মারা যেতে পারে।

৫/ পরিমিত তাপমাত্রার ব্যবস্থা করতে হবে কোন ভাবেই প্রথম দুই সপ্তাহ তাপমাত্রা কম বেশি হওয়া যাবে না এই বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

৬/এমন স্থানে বাচ্চা রাখতে হবে যেন কোন ভাবেই কুকুর,বিড়াল,ইদুর বা কারো মাধ্যমে বাচ্চা আক্রমণ এর শিকার না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

উপরুক্ত বিষয় গুলো যথাযথ ভাবে গুরুত্বের সাথে নিয়ে বাচ্চা লালন পালন করলে ইনশাআল্লাহ আপনি সফল হবেন।

আশাকরি সম্পূর্ণ আলোচনা আপনাকে কবুতরের বাচ্চা নিজে নিজে পালন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।

আজ এখানেই শেষ করছি আবার দেখা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে।আসা করি সাথেই থাকবেন। নতুন এবং প্রয়োজনীয় পোষ্ট গুলো পেতে আমাদের ব্লগটি Follow  করুন এবং নিচের কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান  মতামত দিয়ে আমাদের সংঙ্গে থাকুন। এছাড়াও কোথাও কোন ভুলহলে ক্ষমাসুন্দর দৃৃষ্টিতে দেখার অনুুরোধ রইলো।

আপনাদের ভালোবাসাই আমদের আগামীর পথ চলার পাথেয় ।

আপনাদের সকলের শারীরিক সুস্থতা   ও সকলের কবুতর গুলোর সুস্থতা কমনা করে শেষ করছি। আবার দেখা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে।সবাই ভালো থাকবেন।

আল্লাহ হাফেজ

তথ্য সংগ্রহেঃ-  
জাকারিয়া হাসান এমরান
Admin
Pigeon Healthcare In BD
#pigeon #কবুতর #feralrockdove #squab 
 *******Thank You *******


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ