Ticker

10/খামার ব্যবস্থাপনা/ticker-posts

কবুতরের ফোস্টারিং কি? কিভাবে ফোস্টারিং করবেন?


Fostering অর্থ কি?

Fostering শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো প্রতিপালক বা প্রতিপালন। শব্দটি সর্ব প্রথম ঘোড়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছিলো। কবুতরের ক্ষেত্রে fostering শব্দটি ব্যবহত হয় না, এবে আলাদাভাবে শব্দটিকে ব্যবহার করা যায় আর সেটি হলো Pigeon fostering যার অর্থ হলো "কবুতর প্রতিপালক"।অর্থাৎ যিনি কবুতরের প্রতিপালক হিসেবে কাজ করে তাকেই মূলত Pigeon fostering হিসেবে ধরা হয়। অপর দিকে যে কবুতর প্রতিপালক হিসেবে কাজ করে তাকে Foster Pair বলে। যদিও এদের কে Pumpers ও বলা হয়ে থাকে।কবুতরের এই fostering বিভিন্ন ভাবে করা যেতে পারে।সেগুলোউ আমরা পোস্ট টিতে বিস্তারিত আলোচনা করতে চেষ্টা করবো।

Pigeon Fostering বলতে কি বোঝায়?

Fostering হলো যখন কোন পিতামাতা কবুতর তাদের বাচ্চা প্রতিপালনে অক্ষম থাকে বা কোন কারণ বশত ব্যর্থ হয় বা অধিক হারে বংশ বৃদ্ধির প্রয়োজন হয় তখন মুল পেয়ার কবুতরের ডিম বা বচ্চাকে সরিয়ে অন্য কবুতর বা কোন মাধ্যমে বাচ্চা ফোঁটানো এবং প্রতিপালন করার কৌশল কে Pigeon Fostering বলে।

Pigeon Fostering কখন করা প্রয়োজন?
কেস স্ট্যাডি ১ঃ- কিছু কিছু  কবুতরের প্রজাতি রয়েছে যারা তাদের ডিম পাড়ার পর ডিমে 'তা বা ওম' দেয় না এই ধরনের কবুতরের(পেয়ার-A ) ডিম অন্য কবুতরের (পেয়ার-B) কাছে ফোঁটানোর জন্য দিতে হয় বা অন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়।  যদি তা না করা হয়ই তাহলে ডিম নষ্ট হবার সম্ভাবনা ১০০%।সে ক্ষেত্রে Pigeon Fostering এর প্রয়োজন দেখা দেয়।

কেস স্ট্যাডি ২ঃ- যদি কোন ব্রিডিং করা কবুতর ডিম বা বাচ্চা থাকা অবস্থায় হটাৎ অসুস্থ হয়ে পরে বা মারা যায় বা হারিয়ে যায় বা ডিমে তা দেয়া ছেরে দেয় বা বাচ্চাকে খাওয়ানো ছেরে দেয়। তখন সেই ডিম বা বাচ্চা সুন্দর ভাবে উৎপাদন এর লক্ষ্যে Pigeon Fostering এর প্রয়োজন।

কেস স্ট্যাডি ৩ঃ- যদি কোন খামারি দ্রুত কবুতরের জাত বৃদ্ধি করতে চান তবে Pigeon Fostering এক মাত্র অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়। এটার ক্ষেত্রে যদিও কিছু সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যেমন একটি মাস্টার পেয়ার থেকে যদি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ডিম গ্রহন করা হয় তবে মাস্টার পেয়ার টি অসুস্থ হতে পারে বা বাচ্চা উৎপাদনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে সুতরাং পরিমিত মাত্রায় এ কাজটি করা প্রয়োজন। যাতে মাস্টার পেয়ারের কোন ক্ষতি না হয়।


Pigeon Fostering এর পদ্ধতি সমূহঃ-

***পদ্ধতি ১ঃ- Foster Pair(Pair-B):- এ পদ্ধতিতে Pigeon Fostering এর জন্য মাস্টার পেয়ার (পেয়ার A) এর পাশাপাশি (পেয়ার B) রাখতে হয়। যখন পেয়ার A ডিম দেয়, তখন ডিমটি খুব সাবধানতার সাথে পেয়ার B এর নিচে ডিম ফোটানো এবং পরবর্তী লালন-পালনের জন্য হস্তান্তর করা হয়। ডিম ছাড়াও অল্প বয়সি বাচ্চাদের কে Pigeon Fostering এর মাধ্যমে লালন-পালন করা যায়। যদি পেয়ার B ডিম প্রদানে সক্ষম হয় তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে পেয়ার B ডিম দেবার ৪/৫ দিনের ভেতর ডিমটি সরিয়ে পেয়ার A  এর ডিম হস্তান্তর করা অন্যথায় পেয়ার B ডিম ছেড়ে উঠে যেতে পারে।

Foster Pair(Pair-B)  দুই ধরনের হতে পারে।
১/ রানিং কবুতর যারা নিয়মিতভাবে ডিম প্রদান করতে সক্ষম।
২/ বান্জা কবুতর অর্থাৎ যারা ডিম প্রদানে সক্ষম নয় কিন্তু অন্যের ডিম বাচ্চা সুন্দর ভাবে লালন পালন করে।

Foster Pair(Pair-B)হিসেবে যে সকল কবুতর গুলোকে নির্বাচন করা জরুরীঃ-
১/ Fostering অবশ্যই সুস্থ ও স্বাস্থ্য বান হতে হবে।
২/ Fostering পেয়ার এমন  কবুতর হতে হবে যারা ভালো বাচ্চাকে খাওয়াতে এবং লালন-পালন করতে সক্ষম।
৩/ Fostering কবুতর হিসেবে সেই সমস্ত কবুতর গুলো নির্বাচন করা উচিৎ যারা প্রজাতি হিসেবে উন্নত,দামে সস্তা, বা বাজারে এদের বাচ্চার ভাল দাম পাওয়া যাবে না।
৪/ এমন সব প্রজাতিকে নির্বাচন করা যারা অন্যের ডিম বা বাচ্চাকে লালন পালন করতে পারে। যদিও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আপনি এমন পেয়ার তৈরী করে নিতে পারবেন।
৫/ বান্জা কবুতর যদি হাঁড়িতে ডিম দিলে হাড়িতে বসে তখন তাকে Fostering এর জন্য  নির্বাচন করা।
৬/ বড় আকারের প্রজাতির কবুতরের fostering এর জন্য বড় সাইজের কবুতর foster হিসাবে নির্বাচন করা।


***পদ্ধতি ২ঃ- Incubator system:- এ পদ্ধতিতে Pigeon Fostering এর জন্য পেয়ার-B  এর প্রয়োজন হয় না।এক্ষেত্রে  পেয়ার A ডিম প্রদান করার পর তা Incubator এ রাখা হয়। এবং নিদিষ্ট মেয়াদে ডিম টি ফোটার পর হ্যান্ড ফিডিং বা Pumpers কবুতরের মাধ্যমে বাচ্চাকে প্রতিপালন করা হয়। বিশ্বের অনেক বড় বড় কবুতরের খামার গুলোতে এই পদ্ধতিতে বাচ্চা উৎপাদন করা হয়ে থাকে। যদিও পদ্ধতিটি অনেক ব্যায়বহুল।

***পদ্ধতি ৩ঃ- BTW System —এটি Pigeon Fostering এর ক্ষেত্রে আধুনিক একটি পদ্ধতি। একে “bull” সিস্টেমও বলা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে একটি পুরুষ কবুতরের সাথে ৩/৪ টি মাদি রাখা হয়।এবং পুরুষ কবুতরটি সব গুলো মাদি কবুতরের সাথেই মিটিং করতে চেষ্টা করে।যে সমস্ত মাদি কবুতর গুলি মিটিং করতে সক্ষম হয় তারা আলাদা আলাদা হাড়িতে ডিম প্রদান করে এবং বাকি মাদি গুলোকে খাঁচা থেকে বের করে দেয়া হয়। তখন মাদি গুলোর ডিম সরিয়ে পেয়ার-A এর ডিম চেলে দেয়া হয়। এভাবে মাদি কবুতর গুলো ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন করে এবং বাচ্চা প্রতিপালন করে। যদিও এটি দীর্ঘ মেয়াদি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে।


Pigeon Frostering এর ক্ষেত্রে  ডিম চেলে বা হস্তান্তরের সময়ে সর্তকতা এবং করণীয়ঃ-

১/ ডিম চেলে দেবার সময়ে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন ভাবেই ডিম আঘাতপ্রাপ্ত না হয়।
২/ ডিম হাতের তালুর মধ্যে খুব সাবধানে নিয়ে পেয়ার B এর পেটের নিচে দিতে হবে।
৩/ পেয়ার A প্রথম ডিম দেবার পর তা সাবধানে নকল ডিমের মাধ্যমে হস্তান্তরের মাধ্যমে সরিয়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা এবং দ্বিতীয় ডিমের জন্য  ৪২ -৪৮ ঘন্টা অপেক্ষা করা। পেয়ার A দ্বিতীয় ডিমটি দিলে তবেই দুইটা ডিম একসাথে পেয়ার B বা Pigeon Frostering এর জন্য হস্তান্তর করা।
৪/ পেয়ার A এর ডিম দেবার পর পেয়ার B এর নিচে হস্তান্তরের সময় কাল যেন ৪-৫ দিনের বেশি না হয়। চেষ্টা করা যেন পেয়ার A  দ্বিতীয় ডিম দেবার সাথে সাথে পেয়ার B এর কাছে হস্তান্তর করা। ডিমের বয়স বেশি হলে পেয়ার B ডিম ছেড়ে উঠে যেতে পারে।
৫/ Incubator এ ডিম ফোটানোর সময় কালে কোন অবস্থাতেই ডিম Incubator এর বাইরে না নেয়া।এতে বাচ্চা মারা যেতে পারে।
৬/ ডিম ধরার সময় খুব সাবধানে ধরা যাতে ডিমটি ঝাঁকি না খায়। ঝাঁকি খেলে ভ্রন এর ক্ষতি হতে পারে।
৭/ অপরিপক্ক ডিম,আঘাতপ্রাপ্ত ডিম, Pigeon Frostering এর জন্য নির্বাচন না করা।
 ৮/ ৪-৫ দিন পর ডিম খুব সাবধানে আলোতে নিয়ে দেখতে হবে যে ডিমটি জমেছে কিনা। না জমলে ডিমটি সরিয়ে ফেলা।
৯/ Foster pair দিয়ে ডিম Fostering এর ক্ষেত্রে ডিম রাতে চালা ভালো। এছাড়াও যে কবুতর থেকে ডিম নেয়া হচ্ছে তাকে নকল ডিম দিয়ে বসিয়ে রাখা। তা না হলে ঘনঘন ডিম দেবার কারনে কবুতর অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
১০/ ডিম চেলে দেবার সময়,ও প্রজাতির নামের নোট রাখা। যাতে ডিমটি ফোটার আগে হালকা করে ডিমটি ভেজা কাপড় দিয়ে  মুছে দেওয়া যায়। এতে ডিমের আদ্রতা বজায় থাকবে ও ফুটতে সাহায্য করে।এছাড়াও ডিম ফোঁটার সময়ে প্রজাতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

আজ এখানেই শেষ করছি আবার আসবো নুতন কোন বিষয় নিয়ে।-আল্লাহ হাফেজ

প্রয়োজনীয় পোষ্ট গুলো দ্রুত পেতে আমাদের ব্লগটি Followকরুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামত দিয়ে আমাদের সংঙ্গে থাকবেন।এছাড়াও ব্লগটি অপরের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো।
আপনাদের ভালোবাসাই আমদের আগামীর পথ চলার পাথেয় ।

আপনাদের সকলের শারীরিক সুস্থতা ও সকলের কবুতর গুলোর সুস্থতা কমনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। আবার দেখা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে।এছাড়াও আপনারা কবুতর বিষয়ক যে কোন বিষয় সম্পর্কে আমাদের সাথে শেয়ার করতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। সবাই ভালো থাকবেন।

আল্লাহ হাফেজ

তথ্য সংগ্রহে এবং লেখকঃ-
জাকারিয়া হাসান এমরান
Admin
Pigeon Healthcare In BD



*******Thank You *******


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ