Ticker

10/খামার ব্যবস্থাপনা/ticker-posts

কবুতরের সুস্থ ও সুন্দর বাচ্চা পেতে আপনার করণীয়।


কবুতরের সুস্থ ও সুন্দর বাচ্চা পেতে যে কাজগুলো নিয়মিত করা প্রয়োজন।

আমারা অনেকেই বিভিন্ন সময়ে কবুতরের  সুস্থ বাচ্চা উৎপাদনে বাধাগ্রস্ত হই। মনে রাখবেন আসলে আপনি কোন কিছুতে সফলতা আসে না, এর জন্য প্রয়োজন সেই কাজটির পেছনে সঠিক শ্রম।এতে করে আপনি সফলতা পাবেন। তেমনি  কবুতরের সুন্দর ও সাস্থবান বাচ্চা পেতে আপনাকে কিছু কাজ নিয়মিত করতে হবে। অনেকে বলেন এত কাজ বা দেখাশোনা করার সময় নেই।একটা কথা মনে  রাখবেন কবুতর পালনে সফলতার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুস্থ বাচ্চা উৎপাদন করা। আপনি যদি এটা করতে ব্যর্থ হন তবে আপনি কবুতর পালনে সফল হতে পারবেন না। অনেকে বলেন একটি ডিম ফুটে অন্য টি ফুটছে না বা বাচ্চা ছোট বড় হচ্ছে বা বাচ্চা মারা যাচ্ছে এমন আরও অনেক বিষয় গুলে বিভিন্ন সময়ে আমাদের সামনে উপস্থিত হতে দেখা যায়।এ সমস্থ সমস্যার সমাধানের জন্য আপনাকে কিছু কাজ নিয়মিত অনুসরন করতে হবে। এই সমস্যা গুলোকে সামনে রেখে আমি আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো কিভাবে কবুতরের সুস্থ বাচ্চা পেতে পারেন। আমি আমার আলোচনাকে দুইটা ভাগে ভাগ করে আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো।

ক/ কবুতর ডিম পারার পূর্ব থেকে ডিম ফোটা পযন্ত আপনার করণীয় সমূহ।
খ/ কবুতর ডিম ফোটার পর থেকে বাচ্চা নিজে খাওয়া শেখা পযন্ত করণীয় সমূহ।

চলুন তাহলে মূল আলোচনায় আশা যাক।
ক/ কবুতর ডিম পারার পূর্ব থেকে ডিম ফোটা পযন্ত আপনার করণীয় সমূহ।

এই সময় টা ব্রিডিং করা কবুতরের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়।এ সময় টাতে আপনাকে কিছু কাজ আবশ্যিক করতে হবে।চলুন জেনে নিই আপনার করণীয় সমূহ।

১/ ব্রিডিং কবুতরকে যথা সময়ে কৃমির কোর্স সম্পূর্ণ করানো।( বিঃদ্রঃ -প্রাকৃতিক নিয়মে কৃমির কোর্স কিভাবে করাবেন। পোস্টটি দেখুনঃ)
২/ পরিমিত মাত্রায় ভিটামিন,মিনারেল,ক্যালসিয়াম সহ প্রয়োজনীয় উপাদানের জোগান দেয়া।
৩/ কবুতরের বাসস্থান পরিস্কার রাখা এবং নিয়মিত জীবানু মুক্ত করা।
৪/ নর মাদি সঠিক ভাবে মিটিং করতে পারছে কিনা তা লক্ষ্য করা। না করলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিঃদ্রঃ - কবুতর ঠিকমত মিটিং না করালে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। পোস্টটি দেখুনঃ)
৫/ ডিম দেবার সময় হলে ডিমের হাড়ি(মাটির)দেয়া।এতে ডিমটি সঠিক মাত্রায় তাপ পেয়ে থাকে। আবশ্যই ডিমের হাড়ি দেবার পূর্বে তা জীবাণু মুক্ত করা।
৬/ নিয়মিত গ্রীড সরবরাহ করা। (বিঃদ্রঃ - গ্রীড কিভাবে তৈরি করবেন ভিডিও টি দেখুন)
৭/  সুষম খাবার ও পরিস্কার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা।(বিঃদ্রঃ - সুষম খাবার কিভাবে তৈরি করবেন। পোস্টটি দেখুনঃ)
৮/ একটা ডিম দেবার পর তা সাবধানে সরিয়ে নকল ডিম দেয়া,এবং পরবর্তী ৪৮ ঘন্টা পযূন্ত ২ ডিমের অপেক্ষা করা।২ ডিমটি দেবার পর পূর্বে দেয়া নকল ডিম সরিয়ে ১ দেয়া ডিমটি ২ ডিমের সাথে রাখা।যাতে সমান অনুপাতে দুইটা ডিমে তাপ পেতে পারে।
৯/ ২য় ডিম দেবার পর তারিক লিপিবদ্ধ করা।
১০/ ডিমে তাপ দেবার সময় হতে বাচ্চা নিজে খাওয়া শেখা পযন্ত পর্যাপ্ত খাবার ও পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা।
১১/ ডিমে তাপ দেবার তারিখ থেকে ৫ দিন পর ডিম প্রথম বারের মত পরিক্ষা করা। ভালো ভাবে পরিক্ষা করে দেখা ডিম জমা শুরু করেছে কিনা। ( বিঃদ্রঃ -ডিম জমলে কোন তারিখে কেমন দেখাবে।  পোস্টটি দেখুনঃ)
১২/ ডিমে তা দেবার সময়ে বিনা কারণে কবুতরকে উৎত্যক্ত করা থেকে বিরত থাকা।
১৩/ ডিমে তা দেবার ১২ দিন অতিবাহিত হলে ২য় বারের মত ডিম পরিক্ষা করা যে ডিম ভালো ভাবে জমেছে কিনা।
১৪/ ডিমে তা দেবার ১৭ দিন পর ৩য় বারের মত ডিমটি পরিক্ষা করা এবং একটি হালকা ভেজা কাপর দিয়ে ডিমটি ভালোভাবে মুছে দেয়া এতে ডিমের আদ্রতা ঠিক থাকে এবং ডিম সহজে ফেটে বাচ্চা বের হতে পারে ।তবে এ কাজটি খুব সাবধানে করতে হবে কোন অবস্থাতেই যেন ডিমটি ঝাকি না খায় বা পরে না যায়।
১৫/ ১৮-১৯ দিন পর ভালোভাবে লক্ষ করা যে ২ টা ডিমই ভালোভাবে ফুটেছে কিনা।যদি ১৯ দিনেউ ডিমটি না ফুটে তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

উপরোক্ত কাজ গুলো ডিম দেবার পূর্ব থেকে ডিম ফোটা পযন্ত যথাযথ ভাবে সম্পাদন করা।

এবার আসি ২ য় ধাপে।

খ/ কবুতর ডিম ফোটার পর থেকে বাচ্চা নিজে খাওয়া শেখা পযন্ত করণীয় সমূহ।

এসময়টা সুস্থ ও সুন্দর বাচ্চা পাবার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।এ সময়টাতে যে সকল কাজ করনীয়।
১/ হাঁড়ি পরিস্কার করা এবং হাঁড়িতে নতুন কাপড় দেয়া।
২/ বাচ্চা দুটোকে ভালোভাবে পরিক্ষা করা যে কোনা সমস্যা রয়েছে কিনা।
৩/ দুটো বাচ্চা সমান ভাবে ক্রপমিল্ক পাচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষন করা। যদি কম বেশি হয় তবে একটাকে কিছু সময়ের জন্য সরিয়ে অন্য টাকে খাবার ব্যবস্হা করে দেয়া এতে করে দুইটা বাচ্চাই সমান ভাবে বেড়ে উঠবে।
৪/ ডিম ফোঁটার ৪/৫ দিন পর বাচ্চাদের কে ধরে ভালোভাবে পরিক্ষা করা, এটা দেখা যে বাচ্চার কোন সমস্যা আছে কিনা বিশেষ করে বাচ্চার নাভিতে ইনফেকশন হয়েছে কিনা। যদি নাভিতে ইনফেকশন থেকে থাকে তবে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। (বিঃদ্রঃ- নাভির ইনফেকশনে হলে করনীয় আমাদের ব্লগে বিস্তারিত পোস্ট পাবেন)
৫/ প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার বাচ্চা হাঁড়ি পরিস্কার করা এবং নতুন হাঁড়ির কাপর দেয়া।

৬/ বাচ্চার বয়স ৮/৯ দিন হবার পর ভালোভাবে লক্ষ্য করা দুইটা বাচ্চাই সমান ভাবে খাবার পাচ্ছে কিনা যদি না পায় তবে হাতে ধরে কিছু খাবার খাওয়ানো।বা ৩ নং নিয়ম অনুসরন করা।
৭/ বাচ্চার বয়স ১০ দিন হলে মাটির হাঁড়ি সরিয়ে প্লাস্টিকের হাঁড়ি দেয়া।
৮/ মাঝে মাঝে বাচ্চাকে কিছু সময়ের জন্য রোদে রাখা তবে বাচ্চার বয়স ১০ দিন হলে এটা শুরু করা ভালো।
৯/ পরজীবি নিয়ন্ত্রণ করা বিশেষ করে মশা।খেয়াল রাখা কোনভাবেই যেন বাচ্চাকে মাশায় কামরাতে না পারে।
(বিঃদ্রঃ মশা নিয়ন্ত্রণের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের ব্লগে পোস্টটি দেখুনঃ)
১০/ সম্ভব হলে এ সময় টাতে খাবারের সাথে কিছু পরিমানে সরিষা ও কুসুম মিশিয়ে কবুতরকে খেতে দেয়া।

১১/ যদি কোন কারনে কবুতর বাচ্চাদের কে খাওয়ানো বন্ধ করে দেয় তবে নিয়ম অনুযায়ী  হ্যান্ড ফিডিং করানো।
(বিঃদ্রঃ কিভাবে কবুতরের বাচ্চাকে হ্যান্ড ফিডিং করাবেন এই সম্পর্কে বিস্তারিত আমাদের ব্লগে পাবেন।)

১২/পরিশেষে বাচ্চাগুলো  নিজে খাওয়া শিখলে মা বাবা থেকে আলাদা করা এ সময় টাতে তাদের জন্য ছোট খাবার পরিবেশন করা যাতে ভালোভাবে খেতে পারে এবং হজম করতে পারে।


উপরোক্ত কাজগুলো সঠিকভাবে করতে পারলে ইনশাআল্লাহ ১০০% সুস্থ ও কোয়ালিটি সম্পন্ন বাচ্চা উৎপাদন করা সম্ভব।

বাচ্চা অবস্থায় যে সকল রোগ সমূহ হতে সর্তকতা অবলম্বন করা জরুরী।
১. নাভির ইনফেকশন।
২.এডিনো ভাইরাস।
৩.পক্স।
৪.পিজন ক্লামাইডিয়া।
৫.ডায়রিয়া।
৬.সুপার ক্রোপ।
৭.ক্যাংকার। ইত্যাদি।
এসকল রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের ব্লগ টি ভিজিট করুন। এখানে দেখুন 


পরিশেষে বলবো  সুস্থ বাচ্চা পেতে হলে সুস্থ বাবা মায়ের কোন বিকল্প নেই।এই জন্য আপনি আপনার খামার রোগ মুক্ত রাখতে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলুন। সুস্থ বাচ্চা পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে পূর্ব থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে এতে করে একদিকে আপনি যেমন আপনার খামার কে সুরক্ষিত রাখলেন অপরদিকে অর্থিক ক্ষতির হাত থেকে নিজে রক্ষা পেলেন।আপনাদের কোন বিষয় আমাদের সাথে শেয়ার করতে চাইলে আমাদের কে মেইল করতে পারেন বা আমাদের ফেসবুক পেইজএ ভিজিটর পোস্ট করতে পারেন।

প্রয়োজনীয় পোষ্ট পেতে আমাদের ব্লগটি Follow  করুন এবং আপনার মূল্যবান মতামত দিয়ে আমাদের সংঙ্গে থাকবেন এবং কোথাও ভুলহলে ক্ষমাসুন্দর দৃৃষ্টিতে দেখার অনুুরোধ রইলো।
আপনাদের ভালোবাসাই আমদের আগামীর পথ চলার পাথেয় ।

আপনাদের সকলের শারীরিক সুস্থতা   ও সকলের কবুতর গুলোর সুস্থতা কমনা করে শেষ করছি। আবার দেখা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে।সবাই ভালো থাকবেন।

আল্লাহ হাফেজ

তথ্য সংগ্রহে এবং লেখকঃ-
জাকারিয়া হাসান এমরান
Admin
Pigeon Healthcare In BD

 *******Thank You ****

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

Thanks for Commenting! please follow our blog and see update continue