Ticker

10/খামার ব্যবস্থাপনা/ticker-posts

কবুতরের শীতকালীন পরিচর্যা ও জরুরি পদক্ষেপ সমুহ।


আসসালামু আলাইকুম, আসা করি সবাই আল্লাহ্তায়ালার অসীম কৃপায়  ভালোআছেন।
শীতের আগমনের সাথে সাথে সকল কবুতর পালোকরা একটু বেশি ব্যাস্ত সময় পার করছেন।আজ এই বিষয় টা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চেষ্টা করব কিভাবে শীতের পুরা সময় টাতে আপনার কবুতর সুস্থ ও সুন্দর থাকবে। আসা করি মনযোগ দিয়ে পুরা পোস্টটি পরবেন।

শীতের সময়টা কবুতরদের জন্য একটু খারাপ সময়। এই সময়টাতে কবুতর বিভিন্ন রোগ দ্বারা আক্রান্ত হতে দেখা যায়।মূলত এইসময়টাতে একদিকে যেমন বিভিন্ন রোগের জীবাণু গুলো সক্রিয় হয় অপর দিকে কবুতরগুলো শীতের কারণে চলাফেরা,খাবার ও পানি গ্রহনের পরিমান হ্রাস, রেসিং বা ফ্লাইং মৌসুমের কারনে বহিরাগত কবুতরের সংস্পর্শে আসা, ইত্যাদি কারণে কবুতর বিভিন্ন রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়।কেননা এসময়টাতে কবুতরের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা একটু কমে যায় ফলে পূর্বে কোন ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল কিন্তু সুস্থ হয়ে গিয়েছে এমন কবুতরের মাধ্যমে মূলত শীতকালীন রোগ গুলো বেশি আক্রমণ করে। একবার যদি কোন ভাবে এসব রোগের ভাইরাস কবুতরের শরীরে দেখা দেয় তবে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ক্ষতির পরিমাণ ৯৫% - ১০০% হতে পারে।সুতরাং এই সময়টাতে কবুতর খামারিদের বিভিন্ন সর্তকতা অবলম্বন করা জরুরী। যদিও এ সময় টা কবুতরের ব্রিডিং এর সব থেকে উত্তম সময় হিসাবে ধরা হয়, যদি আপনি সঠিক ভাবে খামার ব্যবস্হাপনা অনুসরণ করতে পারেন তবে সফলতার হার ১০০%।এছাড়াও শীত মৌসুমটা রেসিং এবং হাইফ্লায়ার কবুতরের জন্য সব থেকে উপযুক্ত সময়।বিশ্বের বড় বড় রেসার ও হাইফ্লায়ার পালক থেকে শুরু করে ছোট ছোট খামারিরা এই সময় টাকে রেসিং বা হাইফ্লাইং প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতার জন্য এই সময়টাকে আদর্শ সময় হিসাবে ব্যবহার করেন।


২ টা প্রশ্নে আমি আমার আলোচনা করবো। নিচের দুইটি প্রশ্ন আমাদের মনের মাঝে এই শীত আসলেই দেখা দেয় বিশেষ করে নতুন পালক দের মনে। যাই হোক আমি এই দুইটি প্রশ্নের উত্তর আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চেষ্টা করবো আসাকরি শীতে কিভাবে কবুতরকে সুস্থ রাখবেন তার সমাধান পেয়ে যাবেন।

#১. শীতে কবুতর এর কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে ? 
#২. কবুতর কে সুস্থ রাখতে আপনার করনীয় গুলো কি কি ?

আসুন তাহলে আমরা মূল আলোচনায় যাই।

শীতে কবুতর এর কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে ?

উত্তরঃ যে সকল সমস্যা গুলো শীতে দেখা দেয়।

১.শীতে মশা,পোকা,মাইট এ জাতীয় পরজীবি পোকার প্রাদুর্ভাব বেশী হয়।এর  কবুতর এর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
২.শীতে বিভিন্ন জীবানু সবথেকে বেশি সক্রিয়  হয়ে ওঠে যা কবুতর এর জন্য হুমকিস্বরুপ।
৩.কখনো কখনো কবুতর এর শরীরের সাভাবিক তাপমাত্রা ৪৫° থেকে কমে যায়।ফলে কবুতর অসুস্থ হয়ে পরে।
৪.ঠান্ডা জনিত রোগের প্রকোপ বহুগুনে বেরে যায়। যেমনঃ , চোখ ওঠা, কারন ছাড়া ঝিমানো,সর্দি-কাশিতে ঘরঘর করা, মুখ হা করে শ্বাস নেয়া ইত্যাদি।
৫.শীতে সাল্মোনেল্লা, ই কোলাই সহ অনান্য ক্ষতিকর গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া এর কার্যকারিতা বহুগুনে বৃদ্ধি পায়। যা কবুতর এর জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরুপ। এর আক্রমনে সম্পুর্ণ লফ্ট ধংশ হয়ে যেতে পারে।
৬. শীতে কবুতরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক ভাবে হ্রাস পায়।
৭. অনেক সময় অনেক রোগের জীবানু কবুতর এর  শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকে শীত এলে এসব জীবানু সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে।
৮. শীতে ডাইরিয়া ও পা অবস বা পেরালাইসিস এর মত রোগ এর প্রকোপ দেখাদেয়।

উপরোক্ত বিষয় গুলো ছারাউ আরও কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।যেই সমস্যাই আসুক না কেন মাথা ঠান্ডা রেখে অভিঙ্গ কারো পরামর্শ নিয়ে সমস্যার সমাধান করবেন।

এবার আসি ২য় প্রশ্নেঃ
কবুতর কে সুস্থ রাখতে আপনার করনীয় গুলো কি কি ?

 ১. কবুতর এর খাদ্য তলিকায় তৈলবীজ জাতীয় খাবারের পরিমান একটু বারিয়ে দিন যেমনঃ বাজরা, তিসি, সরিষা, কুসুমবীজ, সূর্যমুখী বিচি ইত্যাদি। এতে কবুতর এর শরীরের তাপমাত্রা ঠিক থাকতে সাহায্য করবে।
২. সপ্তাহে ১ দিন কবুতরকে কালোজিরা,মেথী,জাউন খেতে দিন এতে কবুতর এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বারবে।
৩. খেয়াল রাখবেন আপনার খামার যেন স্যাঁতস্যাঁতে না থাকে
৪. সপ্তাহে এক দিন রসুন পানি দিন, এতে আপনার কবুতর  সাল্মনিল্লামুক্ত থাকবে ও শরীরও উষ্ণ থাকবে।
৫. সপ্তাহে এক দিন লেবু+ লবন+ চিনি মিক্সড করে খাওয়ান। এতে আপনার কবুতর  সাল্মনিল্লামুক্ত থাকবে।
৬. নিয়মিতভাবে  কৃমির কোর্স  করাবেন।
৭. ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স দিন ৩-৪ দিন মাসে ও মাল্টি ভিটামিন দিন ৩-৪ দিন মাসে.
৮. মাঝে মাঝে কবুতর কে বাদাম খেতে দিন।বাদাম এর উপকারিতা অনেক। বাদাম শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
৯. পানির সাথে, তুলসি পাতার রস,নিম পাতা,আদা,সজিনা পাতা,পুদিনাপাতা,কাঁচা হলুদ,পাথরচুনির পাতা, থানকুনি পাতা মিক্সড করে খেতে দিন। এতে একদিকে, ভিটামিন,মিনারেল, ক্যালসিয়াম এর অভাব পুরন হবে অপরদিকে ঠান্ডা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে।
১০. খাবারের সাথে সপ্তাহে ১ দিন দারুচিনি গুরা মিক্সড করে খাওয়ান।
১১. লফ্ট নিয়মিতভাবে পরিস্কার রাখুন।
১২. পরিস্কার খাবার ও পানি সরবরাহ নিশ্চিত করুন।
১৩.কবুতরের খামারে যেন রাতের বেলায় ঠাণ্ডা ঢুকতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।খামারের বা ঘরের চারপাশে ভালো করে পর্দা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।যদি শীতের প্রভাব বেশি থাকে তবে প্রথম যে কাজটি করতে পারেন তা হলো কবুতর থাকার ঘরের উষ্ণতা বাড়াতে পারেন। এক্ষেত্রে বেশির ভাগ খামারি কবুতরের ঘরের ভেতর আলো জ্বালিয়ে তাপ বাড়ানোর চেষ্টা করে থাকেন। যদিও এভাবে ঘরের তাপমাত্রা বাড়ানোর বেলায় কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে-

ক)প্রয়োজনের অতিরিক্ত আলো অপ্রাপ্ত বয়স্ক কবুতরে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই যৌন পরিপক্কতা এনে দেয়। এটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক কবুতরের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরুপ।
খ) প্রয়োজনের অতিরিক্ত আলো বিভিন্ন রকমের বদভ্যাস তৈরি করতে পারে,যা নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাড়ায়।
গ) অতিরিক্ত আলো অতিরিক্ত খাবার গ্রহণে সাহায্য করে যা কিনা স্থুলতা তৈরি করে স্বাভাবিক ডিম পাড়ায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
ঘ) অন্ধকারে কবুতর বিশ্রাম নেয়, তাই সারারাত আলো জ্বেলে রাখলে বিশ্রামে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।এতে কবুতর ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং ডিম ও বাচ্চার ক্ষতি করে থাকে।যেমনঃ- ডিম থেকে উঠে যতে পারে,ডিম নষ্ট করতে পারে,বাচ্চাকে খাওয়ানো ছেড়ে দিতে পারে ইত্যাদি প্রভাব পরতে পারে।

প্রকৃত পক্ষে কবুতরের জন্য ১৫-১৬ ঘণ্টার বেশি প্রয়োজন হয় না এর বেশি আলো কবুতরের জন্য হুমকিস্বরূপ,কেননা কবুতরেরও আমাদেরকে মত বিশ্রামের প্রয়োজন রয়েছে। আর আলো হিসাব করতে হবে ( দিনের আলো + কৃত্রিম আলো) মিলিয়ে। সূর্য উদয় থেকে সূর্যাস্তের আধা ঘন্টা পর্যন্ত এখন দিনের আলো থাকে। তাই এই সময়টুকুর সাথে আরো কতটা সময় আলো জ্বালাতে হবে হিসেব করে নিন,এবং সেই অনুযায়ী আলোর ব্যবস্হা করুন যাতে খামারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।এছাড়াও ঘরের তাপমাত্রা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কৌশল নেয়া যেতে পারে যেমন, রুম হিটার ব্যবহার করা,কয়লা জ্বালিয়ে রাখা,বা এমন ভাবে খামারের চারপাশ এমন ভাবে পর্দা দিয়ে ঘেরাও করা যাতে খামারের আদ্রতা ঠিক থাকে তবে এ ক্ষেত্রে একটা বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে জেন খামারে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা না দেয়।

খামারের তাপমাত্রা বাড়ানোর জন্য চাইলে আলোর পরিবর্তে রুম হিটার জালাতে পারেন। সেক্ষেত্রে নিজেই রুম হিটার বানিয়ে নিতে পারেন বালু আর কয়লা ব্যবহারের মাধ্যমে। পদ্ধতিটা ভালো লেগেছে তাই অন্য একজনের আর্টিকেল থেকে কপি করে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।

হাতে রুম হিটার যেভাবে তৈরি করবেনঃ-  পদ্ধতিটা লিখে বোঝানোটা বেশ কঠিন।

এক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজনঃ-
১) একটি টিনের জার।
২) কিছু লোহার রড। জারের চওড়া থেকে ( ২" ) পরিমান বড়।
৩)আগুন জ্বালানোর জন্য শুকনা কাঠ বা পাট কাঠি।
৪) কিছু কয়লা।


রুম হিটার বানানোর ক্ষেত্রে আপনি একটা টিনের তৈরি জার নিন। এবার জারটির নিচের থেকে ১ ইঞ্চি বাদ রেখে ৪-৫ ইঞ্চির মধ্যে একটা বড় ছিদ্র করুন যাতে জ্বালানি কাঠ ঢুকানো যায়।এবার যেখানে জ্বালানি কাঠ ঢুকানোর জন্য ছিদ্র করা হয়েছে তার উপরে  তার ১ ইঞ্চি পরিমাপ জায়গা বাদ রেখে উপরে ছোট ছোট কিছু ছিদ্র করুন। এমন ভাবে ছিদ্র করুন যাতে একটি রড সমান ভাবে ডুকে। এবার ছিদ্র গুলো দিয়ে আড়াআড়িভাবে কয়েকটি লোহার রড ঢুকিয়ে দিন। এভাবে একটি ছাকনি তৈরি হবে। এবার রডের উপর কিছু কাঠ কয়লা রাখুন। এখন নিচের ছিদ্র দিয়ে জ্বালানি কাঠ ঢুকিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দিন। মানে উদ্দেশ্য হলো কাঠ কয়লায় আগুন ধরানো। কয়লায় আগুন ধরে গেলে জ্বালানি কাঠ সরিয়ে নিন। ধোঁয়া বের হওয়া শেষ হলে জ্বলন্ত কয়লা সমেত টিনের জারটি কবুতরের ঘরে প্রবেশ করান। এরকম কয়েকটা বানিয়ে নিতে পারেন-আপনার রুম হিটার!

১৪. শীতে উত্তর ও পশ্চিম এর বাতাস কবুতর এর জন্য ক্ষতিকর,সুতরাং উত্তর ও পশ্চিম পাশ সম্পুর্ণ ঢেকে দিন।
১৫. মানসম্মত গ্রিড কবুতর কে খেতে দিন।

১৬. দিনে কবুতরদের গায়ে রোদ লাগানো খুবই দরকারি। শীতে এটার গুরুত্ব অপরিসীম। সুস্থ থাকার জন্য শীতে কবুতরদের কিছু সময় রোদে রাখার ব্যবস্থা করুন।

১৭. শীতে সপ্তাহে ১/২ দিন এর বেশি কবুতরকে গোসল করাবেন না, বেশি ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করাবেন না এমন কি খেতেউ দিবেন না।

যদি এভাবে আপনি আপনার খামারের সঠিক যত্ন নিতে পারেন আশাকরি এই শীত অনায়াসে নিশ্চিন্তে পার করতে পারবেন।

প্রয়োজনীয় পোষ্ট পেতে আমাদের ব্লগটি Follow  করুন এবং আপনার মূল্যবান মতামত দিয়ে আমাদের সংঙ্গে থাকবেন এবং কোথাও ভুলহলে ক্ষমাসুন্দর দৃৃষ্টিতে দেখার অনুুরোধ রইলো।
আপনাদের ভালোবাসাই আমদের আগামীর পথ চলার পাথেয় ।

আপনাদের সকলের শারীরিক সুস্থতা   ও সকলের কবুতর গুলোর সুস্থতা কমনা করে শেষ করছি। আবার দেখা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে।সবাই ভালো থাকবেন।

আল্লাহ হাফেজ

স্ট্যাডি ও তথ্য সংগ্রহঃ বিভিন্ন রিসার্চ আর্টিকেল,পিজন রিলেটেড বই,ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা,বিভিন্ন খামারি ও ভেটেরিয়ানদের পরামর্শ।

তথ্য সংগ্রহে এবং লেখকঃ-
জাকারিয়া হাসান এমরান
Admin
Pigeon Healthcare In BD

   *******Thank You *******

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

Thanks for Commenting! please follow our blog and see update continue