Ticker

10/খামার ব্যবস্থাপনা/ticker-posts

ইমপোর্টেড কবুতর খামারে ঢুকানোর পূর্বে করনীয় এবং সর্তকতা।

ইমপোর্টেড কবুতর
ইমপোর্টেড কবুতর

ইমপোর্টেড কবুতর খামারে ঢুকানোর পূর্বে করনীয় এবং সর্তকতা সম্পর্কে আজ আপনাদের সাথে প্রয়োজনীয় কথা আলোচনা করবো।

বাংলাদেশের ফেন্সি কবুতর পালকদের বড় একটা অংশ, কবুতর থেকে ঘনঘন  বাচ্চা পাওয়ার জন্য যতটা মনোযোগী। তার খানিকটা মনোযোগ ও নাই,

  • কবুতর কিভাবে সুস্থ স্বাভাবিক থাকবে?

  • শারীরিক ফিটনেস ভালো থাকবে?

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে?

  •  প্রতিকূল পরিবেশের সাথে এডজাস্ট হয়ে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে বেঁচে থাকবে পারে?

এ ব্যাপারে একেবারেই অমনোযোগী। যতটা মনোযোগী ফেসবুকের বিভিন্ন রকম হাসি তামাশা কমেডি পোস্ট,  এবং অন্যের সমালোচনায় নিজের বাহাদুরি প্রকাশ করায়।

 মেডিসিনের গুনাগুন শুনলে তো কথাই নাই, কখন কিনবে আর কবুতরকে খাওয়াবে।

এইসব কারণে বিভিন্ন সময়ে খামারে অনেক বড় বিপর্যয় ঘটে। আমাদের দেশের মত পৃথিবীর আর কোথাও প্রতিবছর আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় এত কবুতর  মারা যায় কিনা সন্দেহ আছে।

আজকের প্রসঙ্গ ইমপোর্টেড কবুতর। উন্নত দেশ থেকে আসা ইমপোর্টেড কবুতর আমাদের দেশের পরিবেশে আসার পরে কি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পাড়ে তা না জেনেই বেশীরভাগ কবুতর পালক ও-ই কবুতর ব্রিডিং নিয়ে আসে। এবং বেশীরভাগ সময়ই দেখা যায়  কিছু দিন পড়ে ইমপোর্টারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়।

কেন এমন হয় এর কয়েকটি পয়েন্ট নিম্নে তুলে ধরলাম।

  • আবহাওয়া ও তাপমাত্রা পরিবর্তন।

  • বাসস্থান পরিবর্তন।

  •  খাবারের তালিকায় পরিবর্তন।

  • খাবারের রুটিন টাইম পরিবর্তন।

  • জার্নি ধকল।

  •  উন্নত দেশের খামারে ফ্লাইং জোনে থাকা কবুতর, আমাদের দেশে আসার পরে হঠাৎ বদ্ধ খাচায় আটকে যাওয়ার কারণে শারীরিক ফিটনেস ঘাটতি  দেখা দেয়া।

ফলে এ ধরণের শারীরিক আনফিট কবুতর ব্রিডিং এ এসে ডিম বাচ্চা দিলেও, বেশীরভাগ সময় 

  • ডিমের মধ্যে বাচ্চা মারা যায়, 

  • ডিম জমেনা।

  •  কিংবা ডিম জমে বাচ্চা বের হলেও তা শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে জন্ম নেয়।

  • ডিম দেয়ার সময় মাদি কবুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে।

  • ডিম আটকে যায়। 


গত কয়েকবছরে কিছু অসতর্কতার জন্য । কিছু খামারি যে সমস্যার সম্মুখীন হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেই সমস্যার মুল কারন উপলব্ধি করার লক্ষে আজকের এই পোস্ট। 


আবেগ, অসতর্কতা, আর লোভ, একত্রিত হলেই বড় ধরনের বিপদের সম্ভাবনা তখনই দেখা দেয়। তাই বলছি যেকোনো পদক্ষেপে নেয়ার সময় আবেগকে কন্ট্রোল করুন, বিবেক কে জাগ্রত করুণ এবং ভেবেচিন্তে সতর্কতার সাথে সামনে অগ্রসর হউন।আর সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখুন,ফেন্সি কবুতর পুষলে কবুতরের রোগব্যাধি প্রতিরোধে গুরুত্ব দিন। প্রতিকার ও চিকিৎসা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করুন। তারপরে দামী কবুতর পোষায় মনোযোগী হউন। মনে রাখবেন কারো পরামর্শ আর উৎসাহে কেউ সফল হয়না। সফলতা আসে নিজের যোগ্যতা অভিজ্ঞতা কাজের প্রতি মনোযোগ আর শারীরিক পরিশ্রম থেকে। কবুতর সেক্টরেও আপনাকে সফল ভাবে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করতে পারে। আপনার যোগ্যতা অভিজ্ঞতা আর সতর্কতাঃ।

আলোচ্য বিষয়ঃ-

  • ইমপোর্টেড কবুতর বাংলাদেশ প্রবেশ করার ৮/১০ দিন পরে কেন অসুস্থ হয়?

  • ইমপোর্টেড কবুতর  নতুন খামারে প্রবেশ করার পরে খামারের সুস্থ স্বাভাবিক কবুতর গুলোও কেন আক্রান্ত হয়? 

বিষয়টি নিয়ে  একেক জনের একেক রকমের মতামত থাকতেই পাড়ে। তবে ভাববার বিষয় হল, যদি ভাইরাস আক্রান্ত কবুতর আমদানি করা হয়, তাহলে ৩০/৪০ ঘন্টা জার্নি করার পড়ে, ও-ই কবুতরের ড্রপিং ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজে অস্বাভাবিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হওয়ার কথা। আরও একটি ভেবে দেখা উচিৎ, ভাইরাস আক্রান্ত অসুস্থ কবুতর আমদানি করা হলে বেশিরভাগ কবুতর বক্সের ভিতরেই মারা যাবার কথা। 

কিন্তু  ইমপোর্টেড কবুতর গুলো ইমপোর্টার্সদের ঘড়ে পৌঁছানোর পরে সেরকম কোন সিমটম বা লক্ষ্মণ দেখা যায়না। বরং সুস্থ এবং স্বাভাবিক ই দেখা যায়। তবে কবুতরের  ক্যারিং বক্সে যায়গা তুলনায় অতিরিক্ত কবুতর ক্যারিং করার ফলে, শারীরিক ফিটনেস ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা দুর্বল কবুতর গুলো অসুস্থ হয়ে পড়ে । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এগুলো ক্রেতা স্বচক্ষে দেখেও বাছাইকৃত সুস্থ স্বাভাবিক  কবুতর ডেলিভারি নেয়। এমনকি কবুতর ক্রেতার ঘড়ে পৌঁছানোর পড়েও সুস্থ স্বাভাবিক মনে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমস্যাটা ৮ /১০ দিন পড়ে দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে একজন খুবই ছোট অতি নগণ্য কবুতর পালক হিসেবে আমার ব্যক্তিগত মতামত ও করণীয় কিছু পরামর্শ। 

ইমপোর্টেড কবুতর বিষয়ে আংশিক তথ্যঃ- 

ইমপোর্টেড কবুতর ও আমাদের দেশীয় কবুতর মধ্যে পার্থক্য কি?

ইমপোর্টেড কবুতর আমাদের দেশের কবুতরের তুলনায় শারীরিক ফিটনেস ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। এর কারন ওদের খামার ব্যবস্থাপনা, কবুতর পোষার ধরন,খাবার ,ও সিজনাল ব্রিডিং ব্যবস্থা। যা আমাদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

ব্যাকটেরিয়া তথ্যঃ- 

প্রাণীদেহের শরীরে দুটি ব্যাকটেরিয়া বহনকারী কোষ থাকে। একটি উপকারী কোষ , আরেকটি অপকারী কোষ। যতক্ষণ পর্যন্ত শরীরে উপকারী ব্যাকটেরিয়া পর্যাপ্ত মজুদ থাকে। ততক্ষণ পর্যন্ত ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া নিষ্ক্রিয় থাকে।

ইমপোর্টেড কবুতর বাংলাদেশে আসার পরে নিন্মলিখিত কারনে তাদের শরীরে বিভিন্ন সমস্যাগুলি দেখা দেয়।

  • আবহাওয়া পরিবর্তন,

  •  তাপমাত্রার পরিবর্তন, 

  • খাবারের মেনু পরিবর্তন, 

  • খামারের পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে।কবুতরগুলোর মধ্যে কিছুটা মনস্তাত্ত্বিক বিপর্যয় ঘটে।

  •  সাথে 30/40 ঘন্টার জার্নি।  কবুতর গুলোকে শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক ভাবে দুর্বল করে দেয়।

  • খাবারের রুচি নষ্ট হয়, 

  • শরীরের চাহিদার তুলনায় খাবার কম খায় 

ফলে এভাবেই ক্রমান্বয়ে কবুতর গুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। শরীরে উপকারী ব্যাকটেরিয়া গুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এবং ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া গুলো উজ্জীবিত হয়।ফলে ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগে আক্রান্ত হয়। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। ঠিক তখনই ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগটি মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগে পরিণত হয়ে। এধরনের ইমপোর্টেড কবুতরের সংস্পর্শে থাকা আমাদের খামারের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা দুর্বল কবুতর গুলো পর্যায়ক্রমে আক্রান্ত হতে থাকে। 


কবুতরের জন্য রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি থাকাটা কতটা উপকারী । সেটা একটু খেয়াল করলেই বুজতে পারবেন। খামারের বেশীরভাগ কবুতর ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও। কিছু কবুতর আক্রান্ত তো হবেই না । এমনকি ও-ই  কবুতরের মধ্যে ভাইরাসের সিমটম বা লক্ষণ ও প্রকাশিত হয়না। এর অর্থ এই নয় যে খামারে ভাইরাস আক্রমণ হয়েছে আর এই কবুতর গুলো আক্রান্ত হয়নি। অবশ্যই ভাইরাস জীবাণুর উপস্থিতি এই কবুতরের মধ্যেও আছে। শুধু রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি থাকায় রোগের লক্ষ্মণ প্রকাশিত হয়নি।

এক্ষেত্রে করণীয়ঃ- 

  •  ইমপোর্টেড কবুতর সরাসরি খামারে প্রবেশ না করিয়ে। খামার থেকে দূরে, সম্ভব হলে অন্য কোন বাসায় উন্মুক্ত ছেড়ে রাখা।

  • অন্তত এক মাসের জন্য অবজারভেশনে রেখে  পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি কিছু প্রোবায়োটিক  জাতীয় খাবার খাওয়ানো। যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি ক্ষতিকারক  ব্যাকটোরিয়া নিরসনে কার্যকরী। যেমন ভিনেগার, জিংক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে  কার্যকরী ভুমিকা রাখে। মধু, টক্সস্লিন প্লাস, টক দধির পানি, এটি একটি উপকারী ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টিকারী প্রোবায়োটিক। ভিটামিন সি । পর্যায়ক্রমে আলাদা আলাদা সময় ব্যবহার করা।


("খাঁটি এবং ১০০% প্রাকৃতিক মৌচাকের মধুর নির্ভর যোগ্য প্রতিষ্ঠান- ইসওদা") 


ইমপোর্টেড কবুতরের পরিচর্যা এর ক্ষেত্রে কিছু সর্তকতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। 

যেমনঃ-

  • কবুতরের খাবার- এবং পরিচর্যার কাজে নির্দিষ্ট লোক ছাড়া করানো উচিৎ নয়।

  • কোয়ারেন্টাইনে থাকা কবুতরের কোন দর্শনার্থকে খামারে প্রবেশ করতে না দেয়া। 

  • খাবার পাত্র, পানির পাত্র, কবুতরের খাবার, পরিচর্যার যেকোনো ইন্সট্রুমেন্ট। মূল খামারে প্রবেশ না করানো।

  • কোয়ারেন্টাইনে থাকা কবুতরের খাবার ও পরিচর্যার কাজটি করার পরে, পরিহিত পোশাক ও জুতা পরিবর্তন না করে শরীরে জীবাণুনাশক স্প্রে না করে কিংবা গোসল না করে মুল খামারে প্রবেশ কড়া উচিত নয়। কারন ভাইরাস একটি ছোঁয়াছে রোগ। এক্ষেত্রে মূল খামারের পরিচর্যাকারী ওই কবুতরের কাছে যাওয়া-আসা না করাই উত্তম।

এছাড়াও নতুন ইমপোর্টেড কবুতর খামারে প্রবেশ করানোর পরে,নর মাদি উভয়কেই সুস্থ স্বাভাবিক মনে হলেও।

  • জোড়া ভেঙে আলাদা যায়গায়,

  •  মাঝে মাঝে ফ্লাইং জোনে ছেড়ে আমাদের দেশের আবহাওয়া, পরিবেশ, খাবার, খাবারের রুটিন টাইমের সাথে এডজাস্ট হওয়ার সুযোগ দেয়া খুবই জরুরী। 

সর্বশেষ পরামর্শ রইলো 

যেকোনো কবুতর অসুস্থতা থেকে সেরে উঠার পরে অন্তত দুই থেকে তিন মাস জোড়া ভেঙে আলাদা করে রাখুন। এবং কিছু ভিটামিন,যেমন আয়রন ক্যালসিয়াম। বি কমপ্লেক্স,  ভিটামিন ডি। প্রিবায়োটিকস এন্ড প্রোবায়োটিক খেতে দিন। কবুতরের শারীরিক ফিটনেস ঘাটতি পুরণে সময় দিন। 


কথা গুলি শুধুই পরামর্শ, মানা না মানা আপনার মর্জি।আশাবাদী যে সকল খামারি ইমপোস্টার কবুতর খামারে যুক্ত করবেন আর্টিকেল টি তাদের অনেক উপকরে আসবে।

আজ এখানেই শেষ করছি আবার দেখা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে।আসা করি সাথেই থাকবেন। নতুন এবং প্রয়োজনীয় পোষ্ট গুলো পেতে আমাদের ব্লগটি Follow  করুন এবং নিচের কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামত দিয়ে আমাদের সংঙ্গে থাকুন। এছাড়াও কোথাও কোন ভুলহলে ক্ষমাসুন্দর দৃৃষ্টিতে দেখার অনুুরোধ রইলো।

আপনাদের ভালোবাসাই আমদের আগামীর পথ চলার পাথেয় ।আপনাদের সকলের শারীরিক সুস্থতা   ও সকলের কবুতর গুলোর সুস্থতা কমনা করে শেষ করছি। আবার দেখা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে।সবাই ভালো থাকবেন।



Acknowledgment of gratitude:- Khandokar Asaduzzaman Kajol 

Senior Pigeon Breeder and Admin(Only Fancy Pigeon Club in Bangladesh)


আপনি আরও পড়তে পারেন:

কবুতরের ঠান্ডা জনিত সমস্যা চিকিৎসায় প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার।

অসুস্থ কবুতরের চিকিৎসায় প্রতিকারের পাশাপাশি প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব এবং পরবর্তী পদক্ষেপ। 

 *******Thank You *******


আল্লাহ হাফেজ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ