Ticker

10/খামার ব্যবস্থাপনা/ticker-posts

সালমোনেলা প্রতিরোধে মেডিসিন এর ভুমিকা এবং প্রতিরোধে করনীয়।

সালমোনেল্লাহ

সালমোনেলা একটি ব্যাকটেরিয়া জানিত রোগ হলেও এটি  মারাত্মক ছোঁয়াছে রোগ। যে সমস্ত কবুতর সালমোনেলা আক্রান্ত হবার পুর্বে দুটি রোগে আক্রান্ত থাকে

  • একটি কৃমি আক্রান্ত কবুতর। 

  • অপরটি খতিকারক  ই কলাই ব্যাকটেরিয়া বহনকারী  কবুতর।

এই রোগটি সে সমস্ত কবুতরের ক্ষেত্রে মারাত্মক আকার ধারন করে এবং মৃত্যুর হার বাড়িয়ে দেয়।

এই রোগটির প্রতিকারে অ্যান্টিবায়োটিক সহ কয়েকটি মেডিসিন ব্যবহার করে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় ওই কবুতরের ক্ষেত্রে যে কবুতরের শারীরিক ফিটনেস ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি আছে।


আলোচ্য বিষয় হল সালমোনেলা প্রতিরোধে আসলেই কি মেডিসিন এর কোন ভুমিকা আছে? কবুতর পালকরা যে মেডিসিন গুলি দিয়ে সালমোনেলা প্রতিরোধে মাসিক কোর্স করিয়ে থাকে। সেগুলো কি আসলেই কার্যকরী?মেডিসিন কোম্পানি গুলো কি তাদের মেডিসিন বিষয় এমন কোন নির্দেশনা দিয়েছেন? বিষয়টি মেডিসিন ব্যবহারের পূর্বে মেডিসিন এর প্যাকেটের নির্দেশনা ভালো করে পড়ে দেখবেন। বিষয়টি এমন যেন না হয় যে আপনার জ্বর হয়নি অথচ আপনি প্রতিদিন জ্বরের ঔষধ খেয়ে চলেছেন। আমার জানামতে প্রতিরোধ ব্যবস্থায় কার্যকারী ভূমিকা রাখে একমাত্র ভ্যাকসিন। সেটির কাজও নির্দৃষ্ট একটি সময়ের জন্য শুধু এন্টিবডি তৈরি করে। 


সালমোনেলা প্রতিরোধে করনীয়ঃ-

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী আবহাওয়াগত তারতম্য সৃষ্টি হয়েছে।তাই এর থেকে প্রাণীজগতের সকল প্রাণীকে বাঁচার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে নির্দেশনা ও পরামর্শে গুরুত্ব দিয়েছেন। খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে শরীরের ভিটামিন এর অভাব পূরণ করা। ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, জিংক, মিনারেল ও প্রোবায়োটিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।ভিটামিন ডি এর প্রাকৃতিক উৎস হচ্ছে সূর্যরশ্মি যা সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সূর্যের আলো থেকে পাওয়া যায়। এছাড়াও খাবারের মাধ্যমে ভিটামিন ডি গ্রহণ করা য়ায়। জিংক-ব্যাকটেরিয়া বা সর্দি-কাশি উপসর্গে, জিংক ও ভিটামিন সি এর বেশ উপকারিতা রয়েছে। 

জিংকসমৃদ্ধ খাবার গুলো হচ্ছে- আদার রস, রসুন রস, চিনা বাদাম, এবং মধু,  মধুতে এমন কিছু জীবাণু ধ্বংসকারী উপাদান রয়েছেন যেমন হাইড্রোজেন  পারঅক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড যা Virus এর বিরুদ্ধে কাজ করে। তাই ফ্লু বা ব্যাকটেরিয়া উপসর্গে মধু বেশ উপকারী। প্রোবায়োটিক্স -যেমন টক দই, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।


প্রাণীদেহে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কার্যকরীতা কি।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী না হলে অল্প অসুস্থতাতেও যেকোনো প্রাণী খুব সহজে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোগের আক্রমণও জোরালো হয়।এক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস এবং জীবন-যাপনের পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উল্লেখ করছেন। শর্করা,মিনারেল প্রোটিন ও প্রোবায়োটিক শরীরে উপকারী ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি করে,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।প্রাণীদেহের পাকস্থলিতে যে আবরণ আছে, সেটার ভেতরে বেশ কিছু উপকারী জীবাণু কার্যকরী হয়, যার নাম উপকারী ব্যাকটেরিয়া। পাকস্থলীতে যদি উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমে যায় তখন ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া উজ্জীবিত হয়ে প্রাণীদেহকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত করে যার নাম ই-কোলাই। এক্ষেত্রে  প্রোবায়োটিক পাকস্থলীতে উপকারী জীবাণুকে বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হয়। খাবারের মাধ্যমে প্রতিদিনই ভিটামিন 'বি' এবং ভিটামিন সি' জাতীয় খাবার খাওয়ানো উচিৎ। কারন এই ভিটামিন দুটি পানির সাথে মিশে যায়। এগুলো শরীরে জমা হয়না।

শারীরিক এক্সারসাইজ শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করে। শরীরের মাংসপেশি এবং হৃদযন্ত্র অনেক কার্যকরী হয়। একই সাথে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীরের দূরতম প্রান্ত পর্যন্ত অক্সিজেন পৌঁছে যায় এবং শরীরের কোষগুলোতে শক্তি উৎপাদন করে। 


প্রাকৃতিক উপায়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সহায়ক কিছু খাবারের নাম এখানে দেওয়া হলঃ- 

  • আমলকী: কয়েক শতাব্দী জুড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর একটি কার্যকর উপাদান হিসেবে বিশেষ স্থান দখল করে আছে আমলকী। এতে আছে ভিটামিন সি’য়ের প্রাচুর্য, যা শরীরে শ্বেত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। এই শ্বেত রক্তকণিকা অসংখ্য জীবাণুর সংক্রমণ ও রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরকে সুরক্ষিত রাখে। পাশাপাশি আমলকী যোগায় শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। 

  • আদা: এতে থাকে ‘জিনজেরল’ নামক উপাদান যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তি যোগায়। ভাইরাসের বংশবৃদ্ধিতে শক্ত বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই উপাদান।

  • রসুন: ভাইরাস, ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া নাশক গুণ থাকে রসুনে। আর এর সব কৃতিত্বের মূলে আছে ‘অ্যালিসিন’ নামক উপাদান। এটাও রক্তে শ্বেত রক্তকণিকা বাড়ানোর মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

  • হলুদ: ‘কারকিউমিন’ হল হলুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর অস্ত্র। ‘কারকিউমিন’ প্রদাহনাশক গুণসম্পন্ন। ভাইরাসের আক্রমণে শরীরে যে ক্ষতি হয় তা আসলে বিভিন্ন প্রদাহ সৃষ্টিকারী ‘মলিকিউল’য়ের কারণে হয়। আর সেই ‘মলিকিউল’ ধ্বংস করাই হলো ‘কারকিউমিন’য়ের কাজ। এছাড়াও ভাইরাসের বংশবৃদ্ধির গতিও কমায় এই উপাদান।

  • তুলসি: ঔষধি গাছ হিসেবে তুলসি বেশ সুপরিচিত। ভিটামিন সি ও দস্তা প্রচুর পরিমাণে থাকে। ফলে ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক ধ্বংস করতে তুলসি একটি শক্তিশালী অনুসঙ্গ। তবে এটি খালি পেটে খাওয়ানো ভালো। 

  • গোলমরিচ: ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করা এবং ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’ উপাদান সমৃদ্ধ এই গোলমরিচ। আরও রয়েছে ভিটামিন সি। ফলে প্রাকৃতিকভাবে তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।

প্রশ্ন আসতে পারে এগুলো কি কবুতরের খাবার। উত্তর না এগুলো কবুতরের খাবার নয়। তবে আমরা যেহেতু বেশিরভাগ সময় কবুতরকে উন্মুক্ত পরিবেশে লালন-পালন করতে পারিনা।সেহেতু এই উপাদান গুলো রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।


আপনি আরও পড়তে পারেন:

কবুতরের ঠান্ডা জনিত সমস্যা চিকিৎসায় প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার।

অসুস্থ কবুতরের চিকিৎসায় প্রতিকারের পাশাপাশি প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব এবং পরবর্তী পদক্ষেপ। 


আজ এখানেই শেষ করছি আবার দেখা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে।আসা করি সাথেই থাকবেন। নতুন এবং প্রয়োজনীয় পোষ্ট গুলো পেতে আমাদের ব্লগটি Follow  করুন এবং নিচের কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান  মতামত দিয়ে আমাদের সংঙ্গে থাকুন। এছাড়াও কোথাও কোন ভুলহলে ক্ষমাসুন্দর দৃৃষ্টিতে দেখার অনুুরোধ রইলো।

আপনাদের ভালোবাসাই আমদের আগামীর পথ চলার পাথেয় ।

আপনাদের সকলের শারীরিক সুস্থতা   ও সকলের কবুতর গুলোর সুস্থতা কমনা করে শেষ করছি। আবার দেখা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে।সবাই ভালো থাকবেন।

Acknowledgment of gratitude:- Khandokar Asaduzzaman Kajol 
Senior Pigeon Breeder and Admin(Only Fancy Pigeon Club in Bangladesh)


 *******Thank You *******

আল্লাহ হাফেজ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ